ইউনিয়ন অফ সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক সংক্ষেপে USSR যা আমাদের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের সর্বাধিক পরিচিত। ১৯২২ সালে এক চুক্তির মধ্য দিয়ে রাশিয়ার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশ মিলে গড়ে উঠে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। অনেক চড়াই-ঊতরাই এর মধ্য দিয়ে মস্কোর ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এক পর্যায়ে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এর হয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ রয়েছে অনেকগুলো এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন কিভাবে হয় বা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার কারণ তা নিয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে।
১৯১৭ সালে ভ্লামিদির লেনিনের বলশভিক পার্টি নেতৃত্বে অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমের রুশ সাম্রাজ্যের উথুন ঘটে। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম নেতা ছিলেন ভ্লাদিমির লেনিন। এ বিপ্লব সারা বিশ্বে কমিউনিস্ট বিপ্লব হিসেবে পরিচিত ছিল। যার ফলশ্রুতিতে ১৯১৮ সালে তাত্ত্বিক দার্শনিকদের ভিত্তিতে প্রথম বাস্তব সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ঐক্যের সৃষ্টি হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া অংশটিই রাশিয়ান ফেডারেশন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান অঞ্চল ও বিভাগ রয়েছে যার মধ্যে ; রাশিয়া, বেলারুশ, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, জর্জিয়া, আজারবাইজান, লিথুয়ানিয়া, মালদাভিয়া, লাটভিয়া, কিরগিজিয়া, তাজিকিস্তান, আর্মেনিয়া, এস্তোনিয়া সহ আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চল মিলে একটি ইউনিয়ন। যার অফিশিয়াল নাম হলো ইউনিয়ন অব দ্য সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপাবলিকস বা ( USSR) ইউএসএসআর। নিচে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এর কারণ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন কিভাবে হয় তা উল্লেখ করা হলো।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ কি কি এবং কিভাবে পতন হয়?
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ কি কি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন কিভাবে হয়? এই বিষয়টি বিভিন্ন কারন এর সাথে যুক্ত। যার মাধ্যমে এর পতন হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন কিভাবে হয় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
সোভিয়েত শাসননীতি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সাম্যবাদী নেতৃবৃন্দের হাত ধরে যে সোভিয়েত রাশিয়ার জন্য হয়েছিল তা মূলত সমাজতান্ত্রিক, শোষণের মূলকরণ এবং আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তির উপর স্থাপন করা ছাড়া আর কোন বিশেষ কিছু করতে পারেনি। পশ্চাত্যের পুঁজিবাদী জাত থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কে রক্ষা করার জন্য এখানে রাষ্ট্রনেতাগণ অতিমাত্রায় যে কেন্দ্রীয়করণ নীতি গ্রহণ করেছিলেন তার ফলে সমাজিকরণ ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি সোভিয়েত কম্যুনিস্ট পার্টি দলের উচ্চতার নেতৃত্বে প্রাধান্য এবং শাসন কায়েম করার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় দলীয় নেতৃত্ব ছাড়া আমলা ও জনসাধারণের কোন ক্ষমতা ছিল না। K.G.B বা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত নজরদারির দাপটে জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছিল। এর ফলে সোভিয়েত এর জনগণের কাছে এই শাসন হয়ে উঠেছিল শাসন রোধকারী। এটি একটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ হিসেবে বলা যায়।
রাজনৈতিক কারণ
নিকিতা ক্রুশ্চেভ ক্ষমতায় আসার পর স্ট্যালিন এর সংরক্ষণ গুলো অপসারণ করে সাম্যবাদকে তিনি এক জীবনমুখী রূপ দিতে চেয়েছিলেন। সোভিয়েত তিনজনকে তিনি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে এবং বাইরে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে তার অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে চেয়েছিলেন। এভাবে ক্রুশ্চেভ এর হাত ধরে সোভিয়েত সম্প্রসারণবাদ এর সূচনা হয়। ক্রুশ্চেভ পরবর্তী লিওনির ব্রেজনভ এর শাসনকালে সোভিয়েত্র আসছে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা নির্মূল ভাবে বলবৎ হয়। পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর ওপার সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ আরো কঠোর করা হয়। এছাড়া আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া প্রভৃতি স্থানের রুশ সেনা মোতায়ন ও ঠান্ডা লড়াইকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক প্রতিযোগিতার অবতীর্ণ হয়ে সোভিয়েত রাষ্ট্রের আর্থিক সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। কৃষি ও শিক্ষা উৎপাদন ব্যাপক হারে রাস পায় এবং রাশিয়া ক্রমশ আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন শুরু হয়।
অর্থনৈতিক কারণ
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ব্ল্যাকমার্কেটের কারণে সোভিয়েত অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সোভিয়েত অর্থনীতি ছিল সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। শিল্প স্থাপন থেকে শুরু করে শ্রমিকদের মজুরি প্রধান সবই রাষ্ট্র কমান্ড সিস্টেম এর মাধ্যমে নির্ধারণ করত। স্টেলিং এর আমলে ভারী শিল্প উৎপাদনের দিকে জোর দেওয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় ছিল অপ্রতুল। এছাড়াও সোভিয়েত উৎপাদন ভোক্তার তুলনায় বেশি ছিল যা অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করে আসছিল যার সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ।
একই সঙ্গে গর্বাচেভের রাষ্ট্রের কারনে বাড়ানো কর্মচারীর বেতন দিতে এবং সীমাহীন দুর্নীতি সোভিয়েত অর্থনীতিকে দুঃখিগ্রস্থ করে ফেলেছিল। সোভিয়েত অর্থনীতির তেল এবং গ্যাস রপ্তানি নির্ভর ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নকে তৎকালীন পৃথিবীর পাওয়ার হাউস হিসেবে দেখা হতো কিন্তু ১৯৮৬ সালে তেলের দাম ১২০ ডলার থেকে নেমে ২৪ ডলার পার ব্যারেল পরিণত হয়। যার সোভিয়েত এতো অর্থনীতির ভীতু পুরোপুরি ভেঙে ফেলে তার সঙ্গে যুদ্ধ হতে থাকে একের পর এক মার্কিন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা। এভাবেই ১৯৯০ সাল নাগাদ সোভিয়েত অর্থনীতি অতটাই দুর্বল হয় যে এত বড় রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব হচ্ছিল না।
সামরিক কারণ
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ পিছনে সামরিক যথেষ্ট দায়ী। ঠান্ডা যুদ্ধের কারণে সোভিয়েত মিলিটারি বাজেট প্রথম থেকেই অনেক বেশি ছিল। কিন্তু রোনাল্ড রে গান মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এই প্রতিযোগিতামূলক মিলিটারি বাজেট আরো বেড়ে যায়। ধারণা করা হয় সোভিয়েত জিডিপি এর 20 ভাগই মিলিটারি বাজেটে ব্যবহার করা হতো। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত আর্মি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা, কমিউনিস্ট পার্টি এবং কেজিবি মিলিত হয়ে গর্বাচেভের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বিশৃঙ্খলা ও অবিশ্বাস দেখা যায় যেসব কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন আরো দ্রুতদার হয়।
মূল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ
ইয়েংলৎসিন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এক গণভোটের ডাক দিলে নয়টি প্রজাতন্ত্র এই গণভোটে অংশ নেয়। কিন্তু জর্জিয়া, মালদোভা, কাজাখস্থান, ও এই তিনটি বাল্টিক রাজ্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি অনস্থা প্রকাশ করে গণভোট অংশগ্রহণ করেনি। ইতিমধ্যে সোভিয়েত রাষ্ট্র কমিউনিস্ট পার্টিতে ইয়েংলৎসিন বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। উদার পন্থী ইয়েংলৎসিন লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও অস্তুনিয়ার স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেন। ১৯৯১ সালের ৪ই ডিসেম্বর বেলারুশ কয়েকটি রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ মিউস্ক শহরে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্ভাব্য বিলুপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে Commonwealth Of Independent States (CIS) গঠন করে। অবশেষে মিকাইল গর্বাচেভ ২৫ ডিসেম্বর 1991 সালের টিভিতে তার পদত্যাগ আর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেন। এভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। এছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ বা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার কারণ খুঁজতে গেলে আরো অনেক পাওয়া যাবে।
☞ আরো পড়ুন : স্বাধীনতা কী? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচসমূহ আলোচনা কর।
পরিশেষে বলা যায়, ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাস থেকে গর্বাচেভ সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠনের যে শীতলতা আমদানি করেছিল তার সোভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকর ছিল। তিনি স্ট্যালিন এর ধারায় পরিচালিত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটিয়ে অভিকেন্দ্রিক প্রবর্তবাদের অবসান করে দেশে সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক কার্যক্রম করে তুলতে চেয়েছিলেন। সমকালীন রাজনীতি ও সমাজ পূর্ন নির্মাণের পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে গর্বাচেভ প্রসূত উদাহরনৈতিক শাসন ব্যবস্থার সোভিয়েত ইউনিয়নকে পতনের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কেউ রাষ্ট্রীয় সমস্যার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এছাড়াও, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার কারণ আছে যা অনরক মারাত্মক ভূমিকা পালন করেছিল।
- আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন : Facebook Page
Hey I know this is off topic but I was wondering if you knew of any widgets I could add to
my blog that automatically tweet my newest twitter
updates. I’ve been looking for a plug-in like this for quite some time and was hoping maybe you would have some experience with something like
this. Please let me know if you run into anything.
I truly enjoy reading your blog and I look forward to your new updates.!
Please contact us, we will try to help as much as possible.