আজকের পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে, জাভা মানবের বিবরণ, জাভা মানবের জীবাশ্ম আবিষ্কার, জাভা মানবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য, জাভা মানবের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। বিশেষ করে, জাভা মানব কিভাবে আবিষ্কার হয়েছে এবং কে কখন এর সন্ধান পায় তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও এই পোস্টের মাধ্যমে জাভা মানবের বৈশিষ্ট্য সকল দিকগুলো সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রখ্যাত জার্মান জীববিজ্ঞানী ও বিবর্তনবিদ এর্নেস্ট হ্যাকেল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রকাশিত তার বিখ্যাত বইয়ের-সৃষ্টির ইতিহাসে মন্তব্য করেন মানব বিবর্তন যদি ঠিক হয় তবে মানুষ ও এপ-এর মধ্যবর্তী বৈশিষ্ট্যযুক্ত, ঠিক মানুষ নয় আবার এপও নয় এমন প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া যাবে। তিনি একে মানব বিবর্তনের “হারানোর যোগ সূত্র” নামে অতিবাহিত করেন।
জাভা মানবের বিবরণ
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের উত্তর অংশের আগ্নেয়গিরি বিশিষ্ট বন্ধুর অঞ্চলের সোলে নদীর তীরে তৃিণিল নামক গ্রামে ১৮৯১ সালে ওলন্দাজ চিকিৎসক ডাক্তার ইউজিন দুবোয়া প্রায় ৫০ ফুট মাটির গভীরে নদী জাত সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিলুপ্ত অবস্থায় কতগুলো হাড় দেখতে পান। তিনি প্রাথমিক অবস্থায় মাথার খুলির উপর অংশ, দুটি মাড়ির দাঁত ও উড়ুর হাড় উদ্ধার করেন। প্রথমে তিনি এই হারগুলোকে প্রগতিহাসিক প্রাণীর হার বলে উল্লেখ করেন কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এ ধারণা পরিত্যাগ করেন।
ডাঃ দুবোয়া- এর আবিষ্কারের পর প্রায় ৪০ বছর জাভা মানুষের কোন জীবাশ্ম উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ১৯৩৮ সালের ফন কোয়েনিগসওয়েল্ডজাভার পূর্বপ্রান্তে তৃণিল এর কাছাকাছি মোডযোকার্তো নামক স্থানে পিথিক্যানথ্রোপাস এর পেছনের অংশ ও কপালের মধ্যে অংশ নিয়ে গঠিত একটি খুলির ভগ্নাংশ কুড়িয়ে পান। আবিষ্কৃত এসব জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে জাভা মানব সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা সংস্থার হয়।
জীবাশ্ম প্রাপ্তিস্থান: ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপ।
জাভা মানবের স্থিতিকাল : ৮ থেকে ১৬ লক্ষ বছর পূর্বে প্লাইস্টোসিন ভূ-তাত্ত্বিককালে জাভা মানব পৃথিবীতে বসাবস করতো।
জাভা মানবের জীবাশ্ম আবিষ্কার
জার্মানির সহ ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে বিবর্তনবাদের প্রধান বক্তা হেকেল এর লেখা বই পড়ে গভীরভাবে প্রভাবিত হন ইউজিন দুবোয়া। এ লক্ষ্যে তিনি ডাক্তারি পড়ে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর ব্যবস্থেদবিদ্যার শিক্ষকের পদে যোগদেন। হার্লি ও ডারউইনের মতে আফ্রিকান দুর্গম অঞ্চলে হারানো সূত্রের জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দুবোয়া সেখানে যেতে না পেরে অলন্দাস সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে সুমাত্রা পৌঁছান সুমাত্রায় দু বছর অনুসন্ধান করেও দুবোয়া কোন জীবাশ্ম পাননি। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে তাকে জাভাতে বদলি করা হয়।
১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর তিনি সোলো নদীর তীরে নদী জাত সঞ্চয়ের মাধ্যমে প্রাইমেটদের একটি বেশ বড় আকৃতির প্রসন দাঁতের এবং একটি করোটির সন্ধান পান। তিনি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এর নাম দেন মানব দৃশ্য এপ। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে একটি গবেষণা পত্রের দুবোয়া এটিকে নামের চেয়ে জাভা মানব বাস সোলো মানব নামেই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভূত্বক পরীক্ষা করে জানা গেল প্রাপ্ত জীবাশ্ম গুলো ৫ লক্ষ বছর পুরনো। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি হারানোর সুত্রের দাবি ব্যাখ্যা করেন। বিজ্ঞানী মহলে তার এ দাবী প্রত্যাখাত হওয়াতে তিনি ভয়ানক ভাবে আহত হন এবং ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মৃ’ত্যুবরণ করেন।
☞আরো পড়ুন: মৌলিক গণতন্ত্র কাকে বলে? মৌলিক গণতন্ত্রের স্তর কয়টি ও পতনের কারন?
কিন্তু ইতিমধ্যে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় জাভায় একই রকম জীবাশ্ম পাওয়া যায়। দুবো আর আবিষ্কার প্রায় ৪০ বছর পর প্রখ্যাত জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ জি. এই. আর. ফন কোনিংসওয়াল্ড যাবার ট্রিনিল ও স্যঙ্গারান থেকে প্রায় এক ডজন জীবশ্ম সংগ্রহ করেন। এর নাম রাখা হয় ‘ Homo Erectus. ১৯৩০ এর দশকে মাঝামাঝি সময় ফন কোনিংসওয়াল্ড এর উদ্যোগে জাভা দ্বীপের ওই স্থানে জাভা মানবের আরো অনেক জীবাশ্ম পাওয়া যায়।
জাভা মানবের বৈশিষ্ট্য : দৈহিক বা শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য
নিচে জাভা মানবের বৈশিষ্ট্য যেমন : শারীরিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জাভা মানবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য
- চোখের উপর ভুরু অস্থি বেশ সুউচ্চ ও উঁচু ছিল।
- ভুরু অস্থির ওপর পৃথক কোন কপাল ছিল না।
- চোখের উপরিভাগ থেকে কপাল ভালোভাবে অপরিচিত হয়ে চ্যাপ্টা মাথার সাথে মিশে যেত।
- মাথার উপর অংশ কিছুটা ত্রিকোণ আকৃতির ছিল।
- মাথার পর চাঁদ ভাগ বেশ চওড়া ছিল।
- মুখের তালু বেশ বড় ছিল।
- দাঁতের কপাটি ও চোয়াল সামনের দিকে খানিকটা প্রক্ষিপ্ত ছিল।
- দাঁত মানব সম বা হোমিনিডদের মত ছিল।
- বড় দাঁত ও কর্তন দাঁত অন্যদের থেকে দূরবর্তী ছিল।
- উড়ুর হার ও উরুর মাংসপেশীর বন্ধন দেখে মনে হয় পিথিকানথ্রাপাস আধুনিক মানুষের সোজা দাঁড়াতেও হাঁটতে পারতো।
- জাভা মানবের দৈহিক গড় উচ্চতা ছিল ১৭১ সেন্টিমিটার।
- জাবা মানবের গোটা মাথার খুলি না পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীরা অন্যান্য তথ্য থেকে অনুমান করেন যে এ জীবনস্ম মানবের করোটির ধারণ ক্ষমতা ৭৭৫ থেকে ৯৭৫ ঘন সেন্টিমিটার পর্যন্ত ছিল।
জাভা মানবের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য
জাভা মানবের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি তবে ওই এলাকায় অবস্থিত এক প্রকার কর্তন হাতিয়ার দেখে মনে হয় তা তাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
- জাভা মানব খুব সম্ভবত বিভিন্ন প্রকার হাতিয়ার তৈরি করতে পারত।
- জাভা মানব প্রধানত উন্মুক্ত স্থানে বসবাস করত।
- তারা আগুনের ব্যবহার জানতো।
- তারা সম্ভবত ফলমূল প্রভৃতি সংগ্রহকারী ছিল। কেউ কেউ আবার এদের লুন্ঠজিবিও বলে আখ্যায়িত করেছেন।
- এদের মাথার খুলির গায়ে মস্তিষ্কের বাক শক্তির অঞ্চলের ছাপ দেখে মনে হয় এসব মানুষ খুব প্রাথমিকভাবে হলেও কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারতো।
- এছাড়াও যাওয়া মানবের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
শেষ কথা: জাভা মানব হয়তো উল্লেখযোগ্য কোন বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিল না কিন্তু আধুনিক মানবের সাথে তাদের বহু সাদৃশ্য থাকার জন্য তাদের নামের দুবোয়েস প্রদত্ত “প্রিথিক্যাথ্রপাস” শব্দটি বাদ দিয়ে সেখানে হোমো বা মানব শব্দটি যুক্ত করা হয়।
আজকের এই পোস্টে আমরা জানতে পেরেছি যাওয়া মানবের স্থিতি কাল , জাভা মানবের জীবাশ্ম আবিষ্কার, জাভা মানবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য বা দৈহিক, জাভা মানবের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং জাভা মানবের বৈশিষ্ট্য ও বিবরণ ইত্যাদি সম্পর্কে।
FAQ
জাভা মানব কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর : ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে।
জাভা মানবের উৎপত্তিস্থল কোথায়?
উত্তর : আগ্নেয়গিরি বিশিষ্ট বন্ধুর অঞ্চলের সোলে নদীর তীরে তৃিণিল নামক গ্রামে ১৮৯১ সালে ওলন্দাজ চিকিৎসক ডাক্তার ইউজিন দুবোয়া প্রায় ৫০ ফুট মাটির গভীরে নদী জাত সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিলুপ্ত অবস্থায় কতগুলো হাড় দেখতে পান।
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন : Facebook Page