আজকের পোস্টে আমারা আলোচনা করবো, গানিতিক গড় কী? গণসংখ্যা নিবেশন থেকে কল্পিত গড় নির্ণয় পদ্ধতি বা আনুমানিক গড়। অষ্টম শ্রেণী (জেএসসি), নবম-দশম ( এসএসসি) , ভোকেশনাল বোর্ডসহ সকল শিক্ষার্থীদের জন্য গনসংখ্যা নিবেশন বা গনসংখ্যা সারনি থেকে গড় নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি এবং সুত্র ব্যাবহার করা হয় কিন্তু অনেক সময় উপাত্ত থেকে কল্পিত গড় ( Assumed Mean) বা আনুমানিক গড় বের করতে সমস্যা হয় তাই আজকে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং উদাহরণসহ ব্যাখ্য করা হবে।।
প্রতিটি বিষয়কে সুত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সাথে থাকছে গানিতিক গড় নির্ণয় পদ্ধতি সুত্র সহ। এছাড়াও কিভাবে গড় কাজ করে এবং এর সুবিধা কি তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
গাণিতিক গড় বা যোজিত গড় বলতে কি বুঝ?
গাণিতিক গড় বা যোজিত গড় হলো পরিসংখ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি, যা কোনো একটি তথ্য সেটের কেন্দ্রীয় প্রবণতা বা মধ্যমান নির্ধারণ করে। গাণিতিক গড় নির্ণয় করতে প্রথমে সব তথ্য বা পর্যবেক্ষণের মানসমূহকে যোগ করতে হয় এবং তারপর সেই যোগফলকে মোট তথ্যের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করতে হয়। এই ভাগফলকেই গাণিতিক গড় বা যোজিত গড় বলে।
গাণিতিক গড়ের মাধ্যমে একটি তথ্য সংখ্যার সমগ্র মানসমূহের গড় বের করা যায়, যা তথ্য সয়খ্যার মানগুলোর মধ্যে সমতা বা বিস্তার সম্পর্কে একটি ধারণা প্রদান করে। এটি ব্যবহৃত হয় যখন প্রতিটি তথ্যের মানের সমান গুরুত্ব থাকে এবং সেটির সকল মানগুলোর সমন্বিত প্রভাব বিশ্লেষণ করতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ক্লাসের পাঁচটি পরীক্ষার নম্বরগুলো 70, 80, 90, 60, এবং 50 হয়, তাহলে গাণিতিক গড় নির্ণয় করতে এই নম্বরগুলোর যোগফল 350 হবে এবং মোট পরীক্ষার সংখ্যা ৫ হওয়ায়, গাণিতিক গড় হবে ।
যোজিত গড় হল সমজাতীয় কতগুলো রাশির কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপক একটি সংখ্যা। যারা সেগুলোর সমষ্টিকে রাশির মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তার সমান।
গাণিতিক গড়ের বৈশিষ্ট্য
- গাণিতিক গড় থেকে সংখ্যাগুলোর ব্যবধানের মোট যোগফল শূন্য
- গাণিতিক গড় মূল ও মাপুনের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
- গাণিতিক গড় থেকে সংখ্যাগুলোর ব্যবধানের বর্গ সমষ্টি ক্ষুদ্রতম হয়।
- গাণিতিক গড় × গণসংখ্যা = মোট সংখ্যা গুলোর যোগফল
- দুই বা ততোধিক তথ্য সংখ্যার গাণিতিক গড় জানা থাকলে যুক্ত তথ্য সংখ্যা থেকে গাণিতিক গড় নির্ণয় করা যায়।
- এটি নির্দিষ্ট ধারা যুক্ত সকল মানের উপর নির্ভরশীল, তবে কোন একটি মান অজানা থাকলে গাণিতিক গড় নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
কল্পিত গড় কাকে বলে?
কল্পিত গড় বলতে এমন একটি গড়কে বোঝানো হয় যা বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে নয়, বরং অনুমান বা কল্পনা করে নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনার কাছে কোনো বাস্তব গনসংখ্যা সারনির তথ্য নেই এবং আপনি একটি ধারণা বা অনুমান দিয়ে গড় নির্ধারণ করতে চান, তখন এটি কল্পিত গড় হিসেবে ধরা হয়। কল্পিত গড় সাধারণত A দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
মনে করুন, আপনি একটি পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে জানতে চান, কিন্তু আসল নম্বরগুলো জানা নেই। তখন আপনি উক্ত নম্বর গুলো থেকে কোনো একটি অনুমান করে একটি গড় মান হিসেব করতে পারেন, যা বাস্তব গড় নয় কিন্তু একটি কল্পিত গড় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মোট কথা, (Assumed Mean) কল্পিত গড় হলো এমন একটি গড় যা বাস্তব তথ্যের অভাব বা অন্য কোনো কারণে কল্পনা করে নির্ধারণ করা হয়।
কিভাবে গনসংখ্যা নিবেশন থেকে কল্পিত গড় নির্ণয় করা হয়?
গণসংখ্যা সারণি বা গণসংখ্যা নিবেশন ও উপাত্ত থেকে মধ্যমা, প্রচুরক, গাণিতিক গড়, পরিমিত ব্যবধান, বিভেদাংক , ভেদাঙ্ক নির্ণয় করতে চান তাহলে আপনাকে একটি কল্পিত গড় ধরে নিতে হবে, অন্যথায় আপনি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারবেন না। আমরা সাধারনত যেনে থাকি যে কল্পিত গড়, শ্রেণী মধ্যমান থেকে বড় শ্রণীসংখ্যা অনুযায়ী একটি সংখ্যা ধরে নিলেই হয়। তবে এটি অনেক সময় ভুল হতে পারে। তাই আজকে আমরা শিখবো কিভাবে গনসংখ্যা নিবেশন থেকে কল্পিত গড় নির্ণয় করা হয় এবং যেকোনো গনসংখ্যা নিবেশন বা গনসংখ্যা সারনি থেকে কল্পিত গড় নির্ণয় পদ্ধতি। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনি যদি আজকের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেন তাহলে গনসংখ্যা বা কোনো উপাত্ত থেকে কল্পিত গড় নির্ণয় করতে কোন সমস্যা হবে না। কল্পিত গড় বের করতে কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করতে হয় যার নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
আজকে আমরা এমন একটি গণসংখ্যা সারণী বা উপাত্ত নিব যার মধ্য থেকে গাণিতিক মধ্যমা, প্রচুরক, গাণিতিক গড়, পরিমিত ব্যবধান, বিভেদাংক , ভেদাঙ্ক নির্ণয়ের জন্য কল্পিত গড় খুব সহজেই বের করা যায়। উদাহরণসহ নিচে দেওয়া হল।
গনসংখ্যা সারনি থেকে কল্পিত গড় নির্ণয় পদ্ধতি
নিম্নে উপাত্ত হতে গাণিতিক গড় নির্ণয় কর।
মাসিক আয় টাকা | 300 – 500 | 500 – 700 | 700 – 900 | 900 – 1100 | 1100 – 1300 | 1300 – 1500 |
---|---|---|---|---|---|---|
পরিবার সংখ্যা | 25 | 55 | 30 | 20 | 14 | 6 |
প্রতিটি শ্রেণির গড় নির্ণয়:
প্রথমে, প্রতি শ্রেণির গড় মান নির্ধারণ করতে হবে। এটি শ্রেণির নিম্ন ও উচ্চ সীমার গড়।
- 300 – 500: গড় =
- 500 – 700: গড় =
- 700 – 900: গড় =
- 900 – 1100: গড় =
- 1100 – 1300: গড় =
- 1300 – 1500: গড় =
প্রতিটি শ্রেণির গড়কে সংশ্লিষ্ট গণসংখ্যা দিয়ে গুণ:
প্রতিটি শ্রেণির গড় মানকে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সংখ্যা দিয়ে গুণ করতে হবে:
- 300 – 500:
- 500 – 700:
- 700 – 900:
- 900 – 1100:
- 1100 – 1300:
- 1300 – 1500:
গুনফলগুলো যোগ করুন:
প্রতিটি শ্রেণির গড় গুণফল যোগ করতে হবে:
মোট গণসংখ্যা:
এখন মোট গণসংখ্যা যোগ করতে হবে:
আনুমানিক গড় বা কল্পিত গড় নির্ণয়:
গুণফলকে মোট পরিবার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হবে:
- কল্পিত গড় = মোট গুনফল ÷ মোট গণসংখ্যা
যদি আপনার কল্পিত গড় 768 হয়, তাহলে এটি 500-700 শ্রেণির মধ্যে পড়ে। কিন্তু 768, 500-700 শ্রেণির গড় 800 এর কাছাকাছি। সুতরাং, কল্পিত গড় 500-700 শ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে।
গনসংখ্যা উপাত্ত থেকে কল্পিত গড় এর উদাহরণ
মাসিক আয় বা শ্রেণিব্যাপ্তি | পরিবারের সংখ্যা বা গণসংখ্যা (f) | শ্রেণিব্যাপ্তির মধ্যমান (X) | d=x-A÷c | fd |
---|---|---|---|---|
300-500 | 25 | 400 | -2 | -50 |
500-700 | 55 | 600 | -1 | -55 |
700-900 | 30 | 800 (A) | 0 | 0 |
900-1100 | 20 | 1000 | +1 | +20 |
1100-1300 | 14 | 1200 | +2 | +28 |
1300-1500 | 6 | 1400 | +3 | +18 |
মোট (N)=150 | Σfd=-39 |
গাণিতিক গড় নির্ণয় করতে, সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে:
এখানে,
A= আনুমানিক গড় বা কল্পিত গড়।
c= শ্রেণী ব্যবধান = 500-300=200
Σfd= -39
N = মোট গণসংখ্যা = 150
কল্পিত গড় (Assumed Mean) হলো একটি পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি যা হিসাবের কাজ সহজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যখন বড় বড় সংখ্যা নিয়ে গাণিতিক গড় নির্ণয় করা হয়। কল্পিত গড় নির্ণয়ের মাধ্যমে হিসাবের জটিলতা কমে এবং সময় বাঁচে। এই পদ্ধতিতে একটি শ্রেণির মধ্যবিন্দু কল্পিত গড় (A) হিসেবে ধরে নিয়ে পরবর্তী গণনা করা হয়।
সহজ পদ্ধতিতে আনুমানিক গড় বা কল্পিত গড় নির্ণয়ের পদ্ধতি:
- প্রথমে, শ্রেণির মধ্যবিন্দু (X) নির্ণয় করুন:
প্রতিটি শ্রেণির নিম্ন এবং উচ্চ সীমার যোগফলকে ২ দিয়ে ভাগ করলে শ্রেণির মধ্যবিন্দু পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ, শ্রেণি 300-500 হলে মধ্যবিন্দু হবে:
- প্রত্যেক শ্রেণির মধ্যবিন্দুর সঙ্গে কল্পিত গড়ের পার্থক্য (d) নির্ণয়:
- প্রতিটি শ্রেণির মধ্যবিন্দু থেকে কল্পিত গড় (A) বিয়োগ করে d নির্ণয় করা হয়।
উদাহরণ: যদি মধ্যবিন্দু (X) = 600 এবং কল্পিত গড় (A) = 800 হয়, তাহলে d হবে:
- fd গুলোর যোগফল বের করুন:
অর্থাৎ, Σfd নির্ণয় করুন।
- মোট গণসংখ্যা (N) নির্ণয় করুন:
প্রতিটি শ্রেণির গণসংখ্যার যোগফলই হল মোট গণসংখ্যা।
গাণিতিক গড়ের সূত্র প্রয়োগ করুন:
এখানে,
- = গড়
- = কল্পিত গড় (সাধারণত মাঝের একটি শ্রেণির মধ্যবিন্দু)
- = fd গুলোর যোগফল
- = মোট গণসংখ্যা
- = শ্রেণি পরিসর
☞ আরো পড়ুন : এসএসসি পদার্থবিজ্ঞান সাজেশন ২০২৫ ( নবম-দশম) সৃজনশীল প্রশ্ন
কল্পিত গড়ের সুবিধা
- বড় বড় সংখ্যা নিয়ে কাজ করার সময় হিসাব সহজ করে দেয়।
- গণনার ক্ষেত্রে কল্পিত গড় ব্যবহার করলে ভুলের সম্ভাবনা কমে যায়।
- যখন মাঝামাঝি মান নির্ধারণে অসুবিধা হয় তখন কল্পিত গড় একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কল্পিত গড়ের সীমাবদ্ধতা
- এটি একটি অনুমান নির্ভর পদ্ধতি, তাই প্রকৃত মানের সাথে সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে।
- কল্পিত গড় হিসেবে যে মান নেওয়া হয়, তা যদি সঠিকভাবে নির্বাচিত না হয়, তাহলে ফলাফলে ভুল হতে পারে।
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন : Facebook Page
You should be a part of a contest for one of the finest blogs
on the internet. I’m going to highly recommend this blog!!