আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব মৃত্তিকা মাটি কাকে বলে এবং মাটি গঠন এর নিয়ামক কয়টি ও কি কি বিস্তারিত আলোচনা সহ চিত্র আকারে দেখানো হবে। মাটির সৃষ্টির বিভিন্ন ধাপ, উদ্ভিদ ও মাটির পরিপোষক চক্র, বনভূমি অঞ্চল ইত্যাদি এর মাধ্যমে মাটি গঠন প্রক্রিয়া কিভাবে হয় তা আলোচনা করা হলো।
মৃত্তিকা বা মাটি কাকে বলে?
সময়ের ব্যবধানে নিকাস্থিত অবস্থায় জলবায়ু ও জৈব পদার্থের সমন্বিত প্রভাবে রূপান্তরিত উৎস শিলা কর্তৃক সৃষ্ট উদ্ভিদ জন্মানোর উপযোগী প্রাকৃতিক বস্তুর সমষ্টিগত স্তরকে মাটি বা মৃত্তিকা বলে।
বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার অনুসারে পৃথিবীর সৃষ্টি হওয়ার পর তাপ বিকরনের ফলে ক্রমে তার উপরিভাগে এক কঠিন আবরণ সৃষ্টি হয়। অতঃপর এ আবার অন মধ্য এবং উপরিভাগে লক্ষ্য করা যায় যে, অনেক বড় বড় পাথর আছে। বহুকাল ধরে তাপ, শৈত্য ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ এবং ক্ষয় হয় যে পদার্থের সৃষ্টি হয় তা মাটি বা মৃত্তিকা প্রথম ও প্রধান উপাদান। মাটি প্রকৃতি প্রদত্ত একটি বস্তু। নানা প্রকার শীলার পরবর্তীতে রূপ হচ্ছে মাটি বা মৃত্তিকা।
মৃত্তিকা বা মাটি গঠন এর নিয়ামক সমূহ বিবর দাও
সারা বিশ্বে মাটি বা মৃত্তিকা সমীক্ষা পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে বিকাশ প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের মাটি বা মৃত্তিকা পাঁচটি প্রধান নিয়ামক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। নিচে মৃত্তিকা বা মাটি গঠনের নিয়াম গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
- জলবায়ু ( বিশেষ করে উত্তাপ ও দৃষ্টিপাত)
- জৈব পদার্থ (বিশেষ করে দেশীয় উদ্ভিদ)
- উৎস দ্রব্যের প্রকৃতি (বুনট, কাঠামো এবং রাসায়নিক গঠন)
- এলাকায় ভূ-প্রকৃতি (নিষ্কাশন ও উদ্ভিদের ওপর প্রভাব)
- সময় (উৎস দ্রব্য মৃত্তিকায় পরিণত হওয়ার সময়কাল)
জলবায়ু
সামগ্রিক বিচারে মাটি গঠনের জলবায়ুকে সবচেয়ে প্রভাবশালী নিয়ামক হিসেবে মনে করা হয়। জলবায়ু বিজয়িনী ভবনের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রাসায়নিক প্রক্রিয়া গুলোর উপর উত্তাপ ও বৃষ্টিপাত প্রভাব বিস্তার করে অর্থাৎ পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে জলবায়ু মাটি গঠন এর সহায়তা করে। প্রত্যেক ১০° সেলসিয়াস উত্তাপ বৃদ্ধির ফলের রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার দ্বিগুণ হয়। মৃত্তিকা বা মাটির জৈবিক উপাদান গুলোর দ্বারা জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনের প্রতি যথেষ্ট অনুভূতিশীল।
জৈব পদার্থ
মৃত্তিকা বা মাটি গঠন প্রক্রিয়া জৈব পদার্থের ভূমিকা অপরিসীম। জৈব পদার্থ গুলোর মিশ্রণ, সঞ্চয় ও পরিপোষক চক্র সৃষ্টি প্রভৃতি জৈব পদার্থের অবদান।
মাটি গঠন এর উপর উদ্ভিদের প্রভাবের সবচেয়ে লক্ষণীয় প্রমাণ তৃণভূমি ও বনভূমি অঞ্চলের উদ্ভিদের পরিবেশের মধ্যে গঠিত মাটির গুণাগুলির তুলনার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
উৎস দ্রব্যের প্রকৃতি
মৃত্তিকা বা মাটি গঠন প্রক্রিয়া এর উৎস দ্রব্যের প্রকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উৎস দ্রব্য বা আদি শিলা পূর্ণমাত্রায় পরিণত মাটির বৈশিষ্ট্যকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। অধিক বীচুনি ভবন প্রগাঢ়তাসম্পন্ন আদ্র অঞ্চলে এই বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন ; বেলে মাটির বুনট মূলত আদি শিলা দ্বারা গঠিত হয়।
উৎস দ্রব্যের রাসায়নিক ও খনিজ গঠন প্রায়ই কেবলমাত্র বিজয় নিভবন নির্ধারণ করে না, কোন কোন সময় প্রাকৃতিক উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং উৎস দ্রব্য সমূহ মৃত্তিকা গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে বা মাটি গঠন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এলাকার ভূ-প্রকৃতি
মাটি গঠন এর নিয়ামক এর মধ্যে ভূমির ভূ-প্রকৃতি উক্ত স্থানের জলবায়ুর শক্তিগুলোর কার্যকলাপ ত্বরান্বিত করে। সমতল এলাকার পানি নিষ্কাশন মাত্রা ত্বরান্বিত এলাকায় নিষ্কাশন মাত্রার চেয়ে অনেক কম। তৃণভূমি ও বনভূমি প্রান্তিক এলাকার গাছগুলো নিচু এলাকা দখল করে এবং সব জায়গায় প্রধান্য লাভ করে।
সময়
মৃত্তিকা বা মাটি গঠন এর প্রক্রিয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো সময়। কারণ মূল ভূখণ্ড থেকে মাটি সৃষ্টির মাধ্যমে একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান থাকে। ২ থেকে ৫ সেন্টিমিটার মাটি সৃষ্টি হতে কয়েকশো বছর লেগে যায়। মৃত্তিকা বা মাটি গঠন এর জন্য সময়ের প্রয়োজন, তা নির্ভর করে এর সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য বিষয়ে যেমন ; আবহাওয়া ও জীবাণু বা ভূসংস্থানের উপর। মাটি গঠন এর নিয়ামক সময়কালীন কয়েকটি অবস্থায় থাকে। তারমধ্যে: প্রাথমিক অবস্থা, শৈশব অবস্থা, যৌবন অবস্থা, বার্ধক্য অবস্থা, প্রাপ্ত মৃত্তিকা।
শেষ কথা: মাটি গঠনের প্রভাব সৃষ্টিকারী নিয়ামক এর মধ্যে মিথস্ক্রিয় অবশ্যম্ভাবী। একটি নিয়ামক মৃত্তিকা বিকাশের জন্য এর কাজ করে না। সুতরাং মাটি বিচূর্ণীভূত হবার পর থেকে মাটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ছাড়াও উৎস দ্রব্য, সময়, এলাকার ভূ-প্রকৃতি পূর্ণমাত্রার মাটির বৈশিষ্ট্য কে প্রভাবিত করে।
মাটি গঠন আরো পড়ুনঃ উইকিপিডিয়া
যোগাযোগ করুন:
কমেন্টস 2